অহংকারী মানুষ নিজকে সব সময়ে অন্যের চেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ মনে করে এবং লোকজন তাকে সর্বদা বেশী সম্মান ও প্রশংসা করুক এটাই তার প্রত্যাশা থাকে। আর একজন বিনয়ী ও নম্র মানুষ সর্বদা নিজেকে অন্যের চেয়ে ছোট মনে করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী রাসূল হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজকে ছোট মনে করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন; তিনি বলেন, ‘নবী করীম (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি ‘তোমরা আমার প্রশংসায় সীমালংঘন করো না, যেরকম খ্রীষ্টানরা ইবনু মারিয়ামের প্রশংসায় সীমালংঘন করেছে। মূলতঃ আমি হ’লাম আল্লাহর বান্দা। সুতরাং তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল বল।’
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি বনু আদমের নেতা হবো, এতে আমার কোন গর্ব নেই, আমার হাতে প্রশংসার ঝান্ডা থাকবে, এতেও আমার কোন গর্ব নেই। সে দিন আদম (আঃ) সহ সকল নবী-রাসূল আমার ঝান্ডার নীচে সমবেত হবেন এবং আমিই সর্বপ্রথম যমীন থেকে উত্থিত হব, এতেও কোন গর্ব নেই।’
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘একবার এক আরব বেদুঈন মসজিদে প্রস্রাব করে দিল। তখন লোকজন তাকে শাসন করার জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়ল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে বললেন, তাকে প্রস্রাব করতে দাও এবং তার প্রস্রাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কারণ তোমাদেরকে নম্র ব্যবহারকারী হিসাবে পাঠানো হয়েছে, কঠোর ব্যবহারকারী হিসাবে নয়।’
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অভূতপূর্ব বিনয়-নম্রতায় বেদুঈন এতটাই বিমুগ্ধ হ’ল যে, সে সঙ্গে সঙ্গে ইসলাম কবুল করল এবং ছালাতে দাঁড়িয়ে দো‘আ করতে লাগল যে, ‘হে আল্লাহ! আমার ও মুহাম্মাদের প্রতি দয়া করো এবং আমাদের সঙ্গে আর কারো প্রতি দয়া করো না’। সালাম ফিরানোর পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘তুমি একটি প্রশস্ত বিষয় সংকুচিত করলে অর্থাৎ আল্লাহর অসীম অনুগ্রহকে সংকুচিত করে ফেললে’। উল্লিখিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুপম বিনয় ও নম্রতার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। বিশ্ব ইতিহাসে বিনয়-নম্রতার এমন দৃষ্টান্ত আর দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না।
পরিশেষে বলতে চাই, বিনয় ও নম্রতা মহান আল্লাহ প্রদত্ত অসংখ্য নে‘য়ামতের মধ্যে অন্যতম। মানবীয় যতগুলো মহৎগুণ রয়েছে তন্মধ্যে অন্যতম মহৎগুণ। এ গুণে গুণান্বিত ব্যক্তি ইহকালে সর্বসাধারণের মধ্যে হয় সম্মানিত, গ্রহণযোগ্য, স্মরণীয় ও বরণীয়। আর পরকালে হয় জাহান্নামের লেলিহান অগ্নিশিখা হ’তে মুক্ত। তাই দরবারে এলাহীতে প্রার্থনা জানাই, হে আল্লাহ! আমাদেরকে বিনয় ও নম্রতার গুণে গুণান্বিত করে ইহকালে কল্যাণ ও পরকালে জাহান্নাম থেকে মুক্তিদান করুন-আমীন।
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, সাংবাদিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপক, কুমিল্লা।